এলোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

এলোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

অ্যালোভেরা কি?

ইংরেজিতে এই উদ্ভিদের নাম অ্যালোভেরা বলা হলেও গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে এটি ঘৃতকুমারী নামে পরিচিত যা একটি বহুগুণ সম্পন্ন ভেষজ ওষধি উদ্ভিদ। এতে রয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেমনঃ ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিন-এ, বি৬ ও বি২ ইত্যাদি।

স্কিনের হাইড্রেশন লেভেল ঠিক রেখে হারানো গ্লো ফিরিয়ে আনা, সজীব ও সতেজ রাখা, চুল পড়া রোধ করা, চুল ঘন ও লম্বা করা এসব এর জন্য যেসব কসমেটিক্স আমরা সচরাচর ব্যবহার করি সেগুলোর একটি সাধারণ উপাদান হল অ্যালোভেরা। অনেক ধরণের ঔষধি উপাদান থাকায় সৌন্দর্য জগতে অ্যালোভেরা দিয়ে রূপচর্চার প্রচলন ও ব্যবহার অনেক বেশী।

স্কিন ও হেয়ার কেয়ারে অ্যালোভেরা দিয়ে রূপচর্চার গুরুত্ব সবারই কম বেশি জানা আছে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেকেই রূপচর্চার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান অ্যালোভেরাকেই বেছে নিয়েছি। কিন্তু এই অ্যালোভেরা দিয়ে রূপচর্চা করে আমরা কি সব সময়ে সঠিক এবং কার্যকরী ফলাফল পাচ্ছি? মনে হয়তো না…!!!

এর আসল কারণ হলো আমরা অ্যালোভেরা দিয়ে রূপচর্চার সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে জানি না। তাই আমরা আমাদের আজকের আলোচনাটি সাজিয়েছি অ্যালোভেরা কিভাবে স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য ইউজ করবেন এবং এর বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানিয়ে দিতে।

অ্যালোভেরা দিয়ে রূপচর্চা : স্কিন ও হেয়ারের কি কি বেনিফিট হতে পারে?

অ্যালোভেরা দিয়ে রূপচর্চা ও এর উপকারিতা  সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমাদের অনেকেরই। বিশেষ করে মেয়েরা প্রতিনিয়তই গুগলে বিষয়টি অনুসন্ধান করে চলেছেন। চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক অ্যালোভেরা দিয়ে রূপচর্চা ও এর উপকারিতা ।

  • স্কিনের একনি বা পিম্পল দূর করতে খুবই কার্যকর
  • পায়ের গোড়ালি ফাঁটা কমায় ও ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে
  • রোদে পোড়া ভাব বা সান বার্ন দূর করে ও স্কিনে সুদিং ইফেক্ট দেয়
  • এন্টি-এইজিং ইফেক্ট দিয়ে ত্বকে আনে ইয়ংগার লুক
  • স্কিনের রিঙ্কেলস বা বয়সের ছাপ দূর করে
  • ত্বককে  সজীব ও সতেজ রাখে
  • চুলকে শাইনি, সিল্কি ও ঝলমলে করে তোলে
  • ন্যচারাল মেক আপ রিমুভার হিসেবে ব্যবহার করা যায়

অ্যালোভেরার কিছু কার্যকরি প্রয়োগ

  • মুখের দাগ দূর করতে: আপনার মুখের দাগ বা দাগ থেকে মুক্তি পেতে, আপনি আপনার ত্বককে আরও সুন্দর করার জন্য কয়েকটি জিনিস করতে পারেন। আপনার ত্বকের দাগ দূর করতে আপনি অ্যালোভেরা নামক একটি বিশেষ উদ্ভিদ ব্যবহার করতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাগের উপর কিছু অ্যালোভেরার রস বা জেল লাগান। তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠলে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • ত্বকের বলিরেখা কমাতে: অ্যালোভেরা ত্বকের (skin) বলিরেখা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অ্যালোভেরার সাথে মধু মিশিয়ে লাগালে ত্বকের অবাঞ্ছিত দাগ সহ বলিরেখা দূর হয়ে যায়।
  • মেছতা দূর করতে: মেছতা দূর করার আরেকটি উপাদান হলো এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী পাতার জেল। এই জেলের রয়েছে ত্বকের (skin) যাবতীয় সমস্যা দূর করার ক্ষমতা। আক্রান্ত স্খানে আঙুলের ডগার সাহায্যে ধীরে ধীরে জেল ঘষে লাগাতে হবে এবং সারা রাত লাগিয়ে রাখতে হবে। এভাবে কয়েক সপ্তাহ লাগালে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া অ্যালোভেরা জেলের সাথে ভিটামিন ই এবং প্রিমরোজ অয়েল মিশ্রিত করে লাগালে এক সপ্তাহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যাবে।

চুলের (hair) যত্নে এলোভেরা

  • চুল: খুশকি দূর করতে মেহেদিপাতার সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে লাগাতে পারেন চুলে। মাথা যদি সব সময় গরম থাকে তাহলে পাতার শাঁস প্রতিদিন একবার তালুতে নিয়ম করে লাগালে মাথা ঠাণ্ডা হয়। অ্যালোভেরার রস মাথার তালুতে ঘষে এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। চুল (hair) পড়া বন্ধ হবে এবং নতুন চুল গজাবে।
  • শ্যাম্পু করার আগে আধা ঘণ্টা অ্যালোভেরার রস পুরো চুলে (hair) লাগিয়ে রাখুন। শ্যাম্পু করার পর চুল থেকে হাত সরাতেই মন চাইবে না। ঘৃতকুমারী শরীরের ভীতরে যেমন কাজ করে তেমনী শরীরের উপরে ও ত্বক (skin) লাবন্যের রুপ চর্জায় বিশেষ কাজ করে। চুলের রুক্ষতা দূর করতে ঘৃতকুমারী
  • অতিরিক্ত রুক্ষ চুল (hair)থেকে রেহাই পেতে অনেকেই রঙ-চঙে বিজ্ঞাপনের পাল্লায় পড়ে ব্যবহার করেন নামি দামী ব্র্যান্ডের হেয়ার প্রোডাক্ট। আবার অনেকে শরণাপন্ন হন ডাক্তারের, কেউ যান পার্লারে। কিন্তু এত ঝামেলায় না গিয়ে বাসায় বসে একটু সময় বের করেই আপনি চুলের রুক্ষতা দূর করতে পারেন। তাও আবার সামান্য ঘরোয়া জিনিষপত্র দিয়েই।

অ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) হেয়ার মাস্ক

  • অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী খুব ভালো একটি ময়েসচারাইজার। যা শুধুমাত্র ত্বকের (skin) শুষ্কতা ও রুক্ষতাই নয়, দূর করে চুলের রুক্ষতাও। অ্যালোভেরার ব্যবহার চুলের (hair)রুক্ষতা দূর করে চুলকে করবে মসৃণ, কোমল ও উজ্জ্বল।
  • এই মাস্কটি তৈরি করতে আপনার লাগবে ৩/৪ টেবিল চা চামচ ঘৃতকুমারী জেল, দেড় টেবিল চামচ নারকেল তেল ও ৩ টেবিল চামচ টক দই। চুলের (hair) ঘনত্ব ও লম্বা অনুযায়ী পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে।
  • একটি পাত্রে সকল উপাদান একসাথে নিয়ে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগিয়ে নিন ভালো করে।
  • ২০-৩০ মিনিট চুলে (hair)লাগিয়ে রাখুন মিশ্রণটি। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এবং একটি মৃদু শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে নিন। প্রথম ব্যবহারেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন! সপ্তাহে ৩ বার এই মাস্কটি ব্যবহার করুন ভালো ফলাফল পেতে।

অ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) পাতা থেকে জেল বের করার নিয়ম

  • বাসায় ঘৃতকুমারীর পাতা থেকে খুব সহজেই জেল বের করে নিতে পারেন। প্রতিবার তাজা পাতা ব্যবহার করলে ফলাফল বেশি পাওয়া যাবে কিন্তু প্রয়োজনে এটা সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য।
  • একটি ঘৃতকুমারী পাতা নিয়ে এর গোড়ার দিকের অংশ কেটে নিন। এরপর কাটা অংশটি নিচের দিকে ধরে রাখুন।
  • এতে করে পাতা থেকে হলদেটে একটি রস (juice) বের হবে। এই রসটি পুরোপুরি বের না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই ধরে রাখুন। তারপর হলদেটে রসটি ফেলে দিন।
  • হলদেটে রস (juice)পড়া বন্ধ হলে পাতাটি ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর পাতার দুইদিকের কাঁটা ভরা অংশ কেটে ফেলে দিন।
  • কাঁটা ফেলে দেবার পর পাতার সবুজ অংশ চেঁছে ফেলে দিন ও ভেতরের স্বচ্ছ জেলের মত অংশ সংরক্ষণ করুন। এটাই ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা জেল, যা আপনি ফেসপ্যাকে ব্যবহার করতে পারবেন।