ঋতু পরিবর্তনের পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নিচ্ছে শীত। ফাগুনের হাওয়া আসতে না আসতেই হালকা একটু গরমের অনুভব শুরু হয়েছে আমাদের বাংলাদেশে। দেশে বসন্তের আগমনে উৎসবের আমেজ থাকলেও অনেকেরই মনে দেখা দিচ্ছে বিশাল সংশয়। কারণ গ্রীষ্ম আসছে। সেই সঙ্গে আসছে তৈলাক্ত ত্বকের নানা সমস্যাও।
শুষ্ক, স্বাভাবিক আর তৈলাক্ত ত্বকের মধ্যে যাদের ত্বক বেশি তৈলাক্ত তারাই এই সময়টাতে বেশি দুশ্চিন্তায় থাকে। তৈলাক্ত বা অয়েলি স্কিনের জন্য অনেকেই স্কিনের নানা সমস্যায় পড়েন। তাই তাদের জন্য আজকের এই আয়োজন।
টেনশন, আর্দ্রতা, জেনেটিকস এবং ওঠানামা হরমোনসহ তৈলাক্ত ত্বকের অনেক কারণ রয়েছে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের স্কিনই কিন্তু সবচেয়ে ভালো। তৈলাক্ত ত্বক হলে ময়েশ্চরাইজিং ক্রিম কিনতে হবে না। ত্বকের ছিদ্র থেকে বের হওয়া সিবাম, মুখের ত্বককে আর্দ্র রাখার কারণে ত্বক শুষ্ক হতে দেয় না।
ত্বক থেকে যে তেল বের হয় তাতে ভিটামিন ই থাকে, যা প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন ই এর কারণে ত্বক সূর্যের আলো, বায়ুদূষণ এবং ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে রক্ষা পায়।ভিটামিন ই ত্বকে আনে লাবণ্য উজ্জ্বলতা এবং মসৃণ ভাব।
তৈলাক্ত ত্বকে খুব সহজে ব্রণের দাগ পড়ে না। এ জন্য ঘুমানোর আগে হালকা ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ত্বকে ব্যবহার করুন। তৈলাক্ত ত্বক হলে অতিরিক্ত স্কিন কেয়ার প্রসাধনী ব্যবহারেরও প্রয়োজন পড়ে না। আর ব্যবহার করলেও সামান্য পরিমাণ হলেই যথেষ্ট।
তৈলাক্ত ত্বকের সেরা কিছু ডে ক্রিম হলো পাইকারিঘরের সিক্রেট ফেসপ্যাক,সিক্রেট একনিপ্যাক,
লোটাস হার্বালস ওয়াইট গ্লো জেল ক্রিম, ল্যাকমে অ্যাবসলিউট পারফেক্ট রেডিয়েন্স ক্রিম, গার্নিয়ার স্কিন ন্যাচারালস লাইট কমপ্লিট সিরাম ক্রিম, গ্লো অ্যান্ড লাভলি মাল্টি ভিটামিন ক্রিম ইত্যাদি।
নাইট ক্রিম হিসেবে আপনি ব্যবহার করতে পারেন সিক্রেট ফেসপ্যাক,
হিমালয়া হার্বালস নাইট ক্রিম,পন্ডস গোল্ড রেডিয়েন্স ইউথফুল নাইট রিপেয়ার ক্রিম, লেকমে ইউথ ইনফিনিটি স্কিন ফারমিং নাইট ক্রিম কিংবা গ্লো অ্যান্ড লাভলী আর্য়ুবেদের প্রোডাক্টগুলো।
নিচে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফেসপ্যাকের উদাহরণ দেখুনঃ-
বেসনের ফেসপ্যাক
বেসন হলো প্রাকৃতিক ফেসওয়াশ, যা মুখের তেলতেলে ভাব দূর করে তারাতারি উজ্জ্বলতা বাড়ায়। সেই সঙ্গে ত্বকের দাগও দূর করে। ২ চামচ বেসন ও ৪ চামচ দুধ একসঙ্গে ভালো করে গুলিয়ে নিন। এবার
এই পেস্ট মুখে, গলায় লাগান। ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করুন। তারপর তফাতটা নিজেই দেখুন। ত্বক কতটা ফরসা আর তেলমুক্ত হয়েছে।
ডিম, শসা ও পুদিনার প্যাক
ডিমের সাদা অংশ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে, ত্বক টানটান করতে সাহায্য করে। একটি ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে শসার রস ও পুদিনাপাতার পেস্ট মিশিয়ে ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। পুদিনার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণমুক্ত রাখবে ত্বক। এ ছাড়া শসা ত্বককে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখবে।
কমলার ফেসপ্যাক
মুখের অতিরিক্ত তেল কমানোর জন্য কমলালেবুর খোসার জুড়ি নেই। ২ চামচ কমলালেবুর খোসার গুঁড়া, ৪ চামচ দুধ, ১ চামচ কাঁচা হলুদবাটা একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটা শুধু অতিরিক্ত তেলই কন্ট্রোল করবে না, ত্বককে করে তুলবে সুন্দর। সপ্তাহে এক বা দুদিন করুন।
কাঁচা হলুদবাটা, চালের গুঁড়া, কমলার খোসার গুঁড়া এবং সামান্য মসুর ডালবাটা/বেসন একসঙ্গে ্মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর হালকা ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ত্বক কতটা সুন্দর হয়ে গেছে.
পাকা কলার ফেসপ্যাক
পাকা কলা তৈলাক্ত ত্বকের যত্নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ। এটি ত্বকের ঊজ্জলতা আর কোমলতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
লেবুর রস ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে ত্বকের ঊজ্জলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
মধু হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের ব্রণ-ফুসকুড়ির সমস্যা দূর করে ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। ১টি পাকা কলা, ২ চা-চামচ লেবুর রস, ১ চা-চামচ মধু নিন। কলার খোসা ছাড়িয়ে সেটিকে ভালো করে চটকে এর সঙ্গে মধু আর পাতি লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে ঘন পেস্টের মতো তৈরি করুন। এই পেস্ট হাতে, মুখে ও গলার ত্বকে ভালো করে মেখে নিয়ে মিনিট ১৫ রেখে দিন। ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে একটি নরম কাপড় দিয়ে চেপে চেপে মুছে নিন। এটা
সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার এই প্যাক ব্যবহার করতে পারলে খুব ভালো ফল পাওয়া যাবে।
শসার প্যাক
শসা খুব ভালো কাজ করে। ত্বকের ভেতরের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে ও ত্বককে ভেতর থেকে ফ্রেশ রাখে। ২ টেবিল চামচ শসার পেস্ট, ১ চা-চামচ গোলাপজল ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস নিয়ে নিন। একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাকটি মুখে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এটা রোজও করতে পারেন। তাহলে খুব ভালো তেল কন্ট্রোল হবে। আর রোজ সময় না থাকলে সপ্তাহে তিন দিন করুন। ত্বক থাকবে ফ্রেশ ও তেলমুক্ত।
লেবুর রস ও মধুর প্যাক
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে লেবুর রস সবচেয়ে ভালো ঘরোয়া উপাদান, লেবুতে উপস্থিত সাইট্রিক অ্যাসিড তৈলাক্ত ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণ করার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে ত্বকে পিম্পল/ ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
১ টেবিল চামচ তাজা লেবুর রসের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু নিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে গাঢ় লিকুইড তৈরি করুন । এই লিকুইড ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন আপনার ত্বক কতোটা উজ্জল আর লাবন্যময় হয়ে গেছে.