ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের ত্বকে ও অনেক রকম পরিবরতন দেখা দেয়।ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য আমারা কত কিছুই করে থাকি। কিন্তু আমারা জানি না এমন কিছু খাবার আসে যেটা আমরা দৈনন্দিন খেতে পারি এবং এটি আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে তুলবে, ত্বককে করে অতুলনীয় মসৃণ ও দবদবে সাদা।আজ আমরা দেখব সেই সব খাবারের নাম এবং জানব তার কাজ এবং গুণাবলি সম্পর্কে ।
১.পানি
পানির অপর নাম জীবন ।বেশী পরিমান পানি পান করলে আপনার ত্বক হবে উজ্জ্বল মসৃন, পানি পানের বিকল্প নেই।প্রতিদিন গড়ে একজন মানুষের ২.৫/৩ লিটার পানি পান করার প্রয়োজন ।পানি পান করার কারনে আপনার শরীরে ভাঁজ দূর করার পাশাপাশি শরীরে চিনি জমতে দেয় না, পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বকের কোষে পানি পৌঁছায় এবং ত্বক সজীব দেখায় এবং উজ্জ্বল দেখায়।বেশি বেশি পানি পান করলে ত্বককে ব্রণ থেকে রক্ষা করে।
২.ট্মেটো
ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধির জন্য টমেটো একটি গুরুত্বপুর্ন উপাদান, টমেটোতে আছে ভিটামিন সি, ই এবং বিটা ক্যারোটিন যা ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল ফর্সা করে ও ত্বক সুন্দর রাখে .আপনি আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় টমাটো রাখতে পারেন অল্প করে টমেটো সালাদ হিসেবে ও খেতে পারেন.
৩.গাজর
গাজরে আছে বিটা ক্যারোটিন। স্ত্বকের বাহিরের আবরণের কোষের বৃদ্ধি করে, হেলদি স্কিন সেল গুলোকে প্রোমোট করে ত্বককে সতেজ এবং তাজা রাখে। গাজরে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, যেটা আক্রান্ত কোলাজেন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এটি সহজলভ্য এবং সহজেইঙ্খাবারের তালিকায় যুক্ত করা যায়।গাজর আপনি সালাদ হিসেবেও খেতে পারেন।
৪.লেবু জাতীয় ফল
লেবু জাতীয় ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি,আন্টিওক্সিডেন্ট ও অন্যান্য ভিটামিন সমুহ, লেবু, কমলা, মোসাম্বি, জাম্বুরা, মাল্টা এগুলো ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে দারুন কার্যকরী। মেলানিন কমানোর জন্য লেবু জাতীয় ফলের কোন তুলনা নেই। লেবু জাতীয় ফল ত্বককে হাইড্রোটেড রেখে ত্বকের উজ্জলতা ফিরিয়ে আনতে সাহা্য্য করে।
৫.মাছ
ত্বকে প্রাকিতিক উজ্জলতা ধরে রাখতে চাইলে আপনার দৈনন্দিন খাবারে ওমেগা থ্রী সমৃদ্ধ মাছ আপনার মেনুতে রাখতে হবে। ওমেগা থ্রী জাতীয় খাবার আপনার ত্বকের গ্লামার ধরে রাখে এবং আপনার ত্বককে বৃদ্ধ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।তাই আপনার ত্বক সুন্দর রাখতে ওমেগা থ্রী সমৃদ্ধ মাছ অনেক উপকারি।
৬.কুমড়ো বীজ
কুমড়ো বীজ গুনের দিক দিয়ে অসম্ভব উপকারি একটি বস্তু। কুমড়ো বীজ খেলে আপনার শরীরে নতুন নতুন এর কোষের জন্ম হয়।কুমড়ো বিজকে গুড়া করে দুধের সাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ব্যাবহার করলে আপনার ত্বকে পরে থাকা ভাঁজ থেকে রেহায় পাওয়া যাবে এবং আপনার ত্বক হয়ে ফর্সা ও উজ্জ্বল।
৭.আমলকি
আমলকি এমন একটি ফল যার গুনাগুন ও গুরুত্ত বলে শেষ করা যাবেনা। আপনি নিয়মিত আমলকি খেলে কিছু দিন পর আপনি নিজেই আপনার ত্বকের পরিবর্তন অনুভব করতে পারবেন আপনার ত্বকের হারিয়ে যাওয়া উজ্জলতা ফিরে এসেছে। আমলকিতে রয়েছে অনেক পরিমানে ভিটামিন এ যা ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্দি তে সাহায্য করে।
৮.শাক
এমন একটি সবুজ সবজি এটি, যার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। সবুজ শাক-সবজি ত্বকের জন্য খুব উপকারী। এ ধরনের শাক-সবজি ভিটামিন এ, জিঙ্ক, আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এগুলো শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াকে পরিষ্কার রাখে। পালং শাক, ব্রোকলি, পেঁয়াজ কলি, পুই পাতা এবং শসা ত্বকে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। আপনার ত্বককে করে তুলে অসাধারণ উজ্জ্বল এবং মসৃন। নিয়মিত শাক সবজি খেলে আপনার ত্বক নিরাপদ থাকিবে অতিরিক্ত ব্রণ হওয়া থেকে।
৯.বিট
বিট একটি অসাধারন সবজি এটি তরকারির সাথে অথবা জুস বানিয়ে খাওয়া যায়।যখন আমাদের শরীরের হিমগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় এবং শারিরে রক্ত শূন্যতা দেখে দেয় তখন বিট একটি গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা পালন করে।শরীরের রক্ত বাড়াতে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত/আক্রান্ত কোষ দূর করতে বিট অনেক ভুমিকা পালন করে। বিট খেলে আপনার শরীরে উজ্জলতা এবং ত্বক সতেজ হয়ে যাবে।
১০.আপেল
আপেলে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি, এ , সি এবং অনান্য নিউট্রিশন যা আপনার ত্বকে থেকে হারিয়ে যাওয়া বা ড্যামেজ হওয়া স্কিনটোন ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।এটি আপনার ত্বকে হেলদি গ্লো ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
১১.স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরি-তে থাকা ভিটামিন সি, স্যালিসাইলিক এসিড মুখের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং মুখের ছোট ছোট ছিদ্র কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যালাজিক এসিড নামক এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের ড্যামেজ প্রতিরোধ করে ত্বককে সজীব এবং লাবণ্যময় করে তোলে।আপনি ৩/৪ টা স্ট্রবেরি একসাথে নিয়ে এগুলা মধুর সাথে মিশ্রণ করে প্যাক বানিয়ে আপনার ফেসে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন , তার পর হালকা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
১২.শসা
ত্বকের যত্নে শসার কথা কল্পনা করলেই চোখে ভাসে শসার স্লাইস আর মুখে ফেইসপ্যাক তাই না? ফেইসপ্যাকে শসা ব্যবহার করা হয় কেননা এতে আছে কুলিং ইফেক্ট, যা ত্বকে এনে দেয় প্রশান্তি। শুধুমাত্র ফেইসপ্যাকে নয়, রেগুলার শসা খেলে আপনি অনেক উপকার পাবেন। শসাতে আছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি আর ভিটামিন কে। আর এই উপাদানগুলো আপনার স্কিনকে রাখে হেলদি্ আর গ্লোয়িং। আরও উপকারিতা আছে, বয়সের ছাপ কমাতে ও স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখতে দারুন কার্যকরী এই উপাদানটি।
১৩.দই
দই যে কেবল শুধু ত্বকের ব্রণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে তাই না এমনকি ব্রণের দাগ ও ত্বকের বিভিন্ন অসমান রং ইত্যাদিও ঠিক করতে খুবই ভালো কাজ করে। তিন টেবিল চামচ দই এবং এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ওই ফেসপ্যাক মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মুখের ছোপ ছোপ দাগ বা ব্রণের দাগ খুব শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে।আর আপনার ত্বক হয়ে যাবে হেলদি ও উজ্জ্বল।
১৪.ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেট চামড়ার উপরের অংশ এবং রক্তের সেল সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক আর্দ্রতা পায় ও মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। ডার্ক চকলেটে রয়েছে ফ্লাভানলস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অতিরিক্ত সূর্যের তাপে ত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত সেল গুলাকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে । তাছাড়া ত্বকের পানিশূন্যতা দূর করতেও পানির ডার্ক চকলেট অনেক উপকারী। নিয়মিত ডার্ক চকলেট খেলে স্কিনের লাবন্য ও উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়।
১৫.বাদাম
স্কিনের জন্যও দারুন উপকারি বাদাম ভিটামিন ই এর সবচেয়ে ভালো উৎস। এটি ড্যামেজড স্কিন সেলসকে মেরামত করে এবং ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করে। স্নেহজাতীয় খাবার ত্বককে সুস্থ্য ও সুন্দর রাখে। এতে থাকা লিনলেইক এসিড বা প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড ত্বকের রুক্ষতা ও শুষ্কভাব কমিয়ে ফেলে।