পাতলা চুল ঘন করার উপায়

চুল নিয়ে হাজারো সমস্যা। অনেক সময় দেখা যায় অনেক যত্ন করার পরেও চুলের সমস্যা একটার পর একটা যেন লেগেই থাকে। খুশকি, চুল পড়া, রুক্ষ-শুষ্ক চুল, তৈলাক্ত চুল ইত্যাদি। তবে চুলের যত্নে কিছু আছে প্রাকৃতিক উপাদান যা দারুন কাজ করে। দূষণ, অতিরিক্ত কেমিক্যালে ভরা শ্যাম্পু, যত্নের অভাবসহ নানা কারণে চুল পড়ে পাতলা হয় যেতে পারে।

অনেক সময় চুল বাড়েও তা খুব ধীরে ধীরে। তাই ঘন ও ঝলমলে চুল পেতে অনেকেই ইচ্ছা পোষণ করে। সেক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান।  পাতলা চুল ঘন করার জন্য আমরা  কিছু উপাদানের ওপর ভরসা রাখতে পারি। সপ্তাহে অন্তত একদিন এগুলো ব্যবহারে। চুল হবে ঘন, মজবুত ও সিল্কি।

চুল ঘন করার ঘরোয়া উপায়

মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ হচ্ছে চুল। বিশেষত মেয়েদের বা নারীর রুপ বর্ণনায় লম্বা কালো চুলের কথা বলা হয়। এমনকি চুল নিয়ে রয়েছে নানা রকম গান, ছড়া , কবিতা। অনেকেই আবার এই চুলের যত্ন নিতে গিয়ে একটু বেশিই নিয়ে ফেলেন। ফলে টাকা পয়সা এবং চুল দুটোই হারাতে বসেন। মেয়েদের চুলের যত্নে যে ভুলগুলো করবেন না তা নিয়ে আমাদের পোস্ট রয়েছে আপনারা অবশ্যই পড়ে নেবেন। আজকে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে আপনার চুলকে ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়ে সিল্কি ও ঘনকালো করবেন। তাহলে আসুন জেনে নেই চুল ঘন করার ঘরোয়া উপায় । চুলের যত্নের সাথে সাথে ঘরে বসে ত্বকের যত্ন নিয়েও আমাদের ওয়েবসাইটে আলোচনা করা হয়েছে। এসকল টিপস পেতে ব্লগ পেজে ক্লিক করুন আর দেখে নিন আপনার ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় টিপস।

ক) অ্যালোভেরা

চুল ঘন করার ঘরোয়া উপায়ের মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান হল অ্যালোভেরা চুলের যত্নে এটি অনেক বেশি কার্যকরী।চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখতে ও চুল পড়া কমাতে অ্যালোভেরা জেল খুবই কার্যকর।ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এটি আপনাকে ফিরিয়ে দিবে ঘন ও কালো চুল।এটি চুলের ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ময়েশ্চার যোগায়।অ্যালোভেরার জেল বের করে সরাসরি চুলে লাগিয়ে নিন। এক ঘণ্টা সময় দিন শুকাতে। তারপরে শ্যাম্পু করে নিন। এটি হেয়ার ফল কন্ট্রোল করার পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করবে। সেই সাথে চুল ও হয়ে উঠবে উজ্জ্বল। নিয়মিত করলে লক্ষণীয় পরিবর্তন চোখে পড়বে অল্প কিছু দিনেই।

খ)পেয়াজ

পেঁয়াজের রসের সঙ্গে লেবুর রস অথবা নারকেলের তেল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় শাইনিং করে ঘষুন। এবং ১৫ মিনিট পর সালফেট নেই এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন চুল। এটি  নিয়মিত ব্যাবহার করলে আপনার ্পাতলা চুল হবে ঘন ও কালো।

গ ) জবা ফুল

রক্ত জবা ফুল চুল ঘন করার পাশাপাশি অল্প বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়া রোধ করে। জবা ফুলের পেস্ট তৈরি করে নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে  চুলের গোঁড়ায় লাগিয়ে রাখুন। ত্রিশ মিনিট পরে শ্যাম্পু করে চুল ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন অল্প কয়েক দিনের মধ্যে আপনার চুল হয়ে গেসে ঘনকালো ও লম্বা।

ঘ) হেনা বা মেহেদি

হেনা চুলের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক  ভলিউমাইজার হিসেবে কাজ করে। চায়ের লিকার, ডিম, লেবুর রস, টক দইয়ের সাথে হেনা পাউডার মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। ঘণ্টা খানিক এভাবেই রেখে দিন। তারপরে ব্রাশের সাহায্যে পুরো চুলে লাগান। এক ঘণ্টা পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ঙ )ক্যাস্টর অয়েল (Castor oil)

ক্যাস্টর অয়েল খুব পরিচিত একটি হেয়ার অয়েল যা চুলের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য খুব উপকারী এটির বহু গুণ, এটি মাথায় রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের গোড়া মজবুত করে। এই অয়েলটিতে রয়েছে  প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও প্রোটিন যা চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে ও চুলের ঘনত্ব বাড়ায়। ক্যাস্টর অয়েল সাথে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ভাল করে মাসাজ করুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট (রাতে শোয়ার আগে)। সকালে ঘুম থেকে উঠে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে ৩-৪ বার ব্যাবহার করুন ভালো ফল পেতে।

চ )ডিমের সাদা অংশ

চুলের রুক্ষতা কাটাতে ডিম খুব উপকারী। এটি চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে। ১ টি ডিমের সাদা অংশের সাথে ৩ টেবিল চামচ জল দিয়ে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ভাল করে শ্যাম্পু করে ফেলুন। শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

কিছু দিন ব্যবহারের পর দেখবেন আপনার পাতলা চুল আরো ঘন ও কালো হয়ে গেছে।

ছ )আদার রস (Ginger juice) 

আদার রস চুলকে ঘন করে আদার রসের গুণাগুণ প্রচুর। এটি চুলের পুষ্টি যোগায়, চুলের গোড়া শক্ত করে, চুলকে মজবুত করে। আদার রস চুল পড়া বন্ধ করে। আদা থেঁতো করে তার রস চুলে ১০-১৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন।কিছুদিন ব্যাবহারের পর দেখবেন আপনার চুল ঘন ও কালো হয়ে গেছে।

চুলের গোড়া শক্ত করার উপায়

চুল পড়া নিয়ে সমস্যায় নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। চুলের গোড়া শক্ত করার এই সমস্যা সমাধানের জন্য নানান কিছু করেও কোন লাভ হচ্ছে না। চুল পড়া সমস্যার সমাধান করতে না পেরে যারা হতাশায় ভুগছেন তাদের জন্য আজকের চমক।

এই সমস্যা সমাধানে যা যা লাগবে :

  • নারিকেল তেল ৪০%
  • কাঠবাদামের তেল (Almond Oil) ৩০%
  • জলপাইয়ের তেল (Olive Oil) ২০%
  • ক্যাস্টর তেল (Castor Oil) ১০%

তারপর এই মিশ্রণের সাথে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল (১টি বা চুলের পরিমাণ অনুযায়ী বেশি নেওয়া যেতে পারে)

সপ্তাহে দুইবার রাতের বেলা চুলের গোড়ায় ভাল করে মাসাজ (Massage) করুন। পরের দিন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে অল্পদিনেই দেখবেন চুলের গোড়া শক্ত হয়েছে এবং চুল পড়া বন্ধ হয়েছে। এটি নিয়মিত ব্যবহার করুন।

কি খেলে চুলের গোড়া শক্ত হয়

চুলের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য কিছু জিনিস নিয়মিত করতে হবে। যেমন —

* নিয়মিত শাক সবজি খেতে হবে,

* আমিষ জাতীয় খাবার যেমনঃ ডিম, মাছ ইত্যাদি খেতে হবে,

* সুষম খাবার দুধ খেতে হবে,

* ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার যেমন লেবু, মালটা ইত্যাদি খেতে হবে,

* ভিটামিন-ডি চুল হারানোর কারণ হতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট রোদে থাকতে হবে,

* নিয়মিত  পানি পান করতে হবে,

* মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে,

* কিছু হালকা ব্যায়াম নিয়মিত করা উচিত প্রভৃতি।

মোট কথা, নিজের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করবেন না।

কি খেলে চুল পড়া বন্ধ হয়

আমাদের সবাইকে কম-বেশি চুল পড়ার সমস্যাটা ভোগায়। বিশেষ করে ঘুম থেকে ওঠার পর দেখা যায় বালিশে উপর প্রচুর চুল পড়ে আছে। প্রায় ১০০ করে চুল পড়ে প্রতিদিন। কিন্তু প্রত্যেক মানুষের সৌন্দর্য বাড়ায় চুল। তাই একটু সচেতন আর আমাদের খাদ্যাভাস চুল পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

)পালং শাক

পালং শাক একটি পাতাময় সবজি, যা চুলের জন্য উপকারী। পালং শাকে আছে ভিটামিন কে, এ, সি, বি, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, আয়রন ও ফ্যাটি অ্যাসিড। পালং শাক চুল ও মাথার ত্বকের সাস্থের জন্য উপকারী। এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনিং এর ক্ষেত্রেও অনেক উপযোগী। চুল ও মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যে উপকারী। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা চুলকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। এতে থাকা ভিটামিন বি ও সি চুল পড়া কমায় এবং চুল করে ঘন কালো মসৃণ ।

খ )পেয়ারা

পেয়ারাতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা কমলালেবুর তুলনায় অনেক বেশি। এই ভিটামিন সি চুলের আগা ফেটে যাওয়া ও ভেঙ্গে যাওয়া বন্ধ করতে অনেক সাহায্য করে। পেয়ারা এমন একটি ফল যাতে ভিটামিন বি ও সি সমপরিমাণে রয়েছে, যা চুল বৃদ্ধিতে অনেক সহায়তা করে।

 গ )সামুদ্রিক মাছ

চুলের জন্য আরেকটি উপকারি  উপাদান হলো ভিটামিন বি। এই ভিটামিন লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে করে রক্তে বেশি বেশি অক্সিজেন ও পুষ্টি মাথার তালু ও চুলের গোঁড়ায় পৌঁছে দেয়। এভাবেই তৈরি হয় শক্ত ও লম্বা চুলের ভিত। ভিটামিন বি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় সামুদ্রিক মাছে। ভিটামিন বি এর জন্য চুল পড়া বন্ধ হইয়া যায়।

 ঘ )গাজর

চোখের জন্য যেমন ভালো ভিটামিন-এ, তেমনি চুলের জন্যও দারুণ উপকারী। এটি কোষের বেড়ে ওঠাকে ত্বরান্বিত করে। তাই এই ভিটামিন সবজি গাজর বাড়াবে আপনার চুলের শক্তি ও সমৃদ্ধি। প্রতিদিন গাজর খেলে আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে আপনার চুল হবে ঘন কালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *