বডি লোশন কি?
বডি লোশন হচ্ছে এক ধরনের ময়েশ্চারাইজার ক্রিম যা ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে সাহায্য করে। সাধারণত, শীতকালে আমরা বডি লোশন ব্যবহার করি। এই লোশন ত্বকে একাধিক উপকারি ভূমিকা রাখে। হাত ও পা যেহেতু সচরাচর খোলা থাকে, এসব স্থানে প্রতিরক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে বডি লোশন।
বডি লোশনের উপকারিতাসমূহঃ
- শুকনো ত্বকের যত্নঃ প্রখর আবহাওয়ায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের নিয়মিতভাবে বডি লোশন ব্যবহার করা উচিত। বাতাস, ঠাণ্ডা, সূর্য ইত্যাদির কারণে ত্বক শুকিয়ে যেতে পারে। তাই ত্বকের কোষগুলোতে পানির সরবরাহ সঠিক পরিমাণে বজায় রাখতে বডি লোশন দারুণ কার্যকর।
- মসৃণ ত্বকঃদেহের ত্বকের সব অংশ মসৃণ হয় না। যেমন হাঁটু, কনুই-এর আশপাশ। রাতে শোয়ার আগে, গোসলের পরে এসব স্থানে বডি লোশন নিয়মিত মাখলে শরীরের অন্যান্য অংশের মতো এ স্থানগুলোও মসৃণ হয়।
- ত্বকের ক্ষত শুকানোঃত্বকের অনেক জায়গায় মাঝেমধ্যে ক্ষত হয়। যেমন হাত দিয়ে বেশি কাজ করলে বা বেশিক্ষণ হাঁটলে যথাক্রমে হাত ও পায়ের চামড়ায় দাগ পড়ে যায়। ব্যথা তো হয়ই, এসব জায়গা দেখতেও খারাপ লাগে। বডি লোশন মাখলে এসব জায়গা তুলনামূলক দ্রুত শুকায়। তবে ক্ষত বেশি হলে নিজে সারানোর চেষ্টা না করে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- মিষ্টি গন্ধঃ বডি লোশনগুলোর নিজস্ব সুবাস রয়েছে। আপনি চাইলে আপনার পছন্দ ও ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী সেন্ট বেছে নিতে পারেন। বাইরে বেরোনোর আগে, বা গোসলের পর লোশন মাখলে শরীর থেকে মিষ্টি গন্ধ বের হয়। এমনকি কারও কাছাকাছি বসলে তার নাকেও এই সুঘ্রাণ যায়। ভালো অনুভূতির আবহ তৈরি করে এই ঘ্রাণ।
বডি লোশন মুখে ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তরঃ মুখের ময়শ্চারাইজার হিসেবে বডি লোশন মাখা একেবারেই উচিত নয়। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বডি লোশন মুখে ব্যবহার করলে তেমন ক্ষতি নেই। তবে ত্বকে কোনো বিশেষ সমস্যা থাকলে (ব্রণ, অ্যাকজিমা, ইত্যাদি) বডি লোশন লাগানোর পর ত্বকে জ্বালাপোড়া এমনকি অ্যালার্জিও দেখা দিতে পারে।
কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার বডি লোশনের উপাদানগুলো একবার দেখে নিতে হবে। সচরাচর বডি লোশনে এক্সফলিয়েটিং অ্যাসিড থাকে যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু উচ্চ মাত্রায় থাকলে তা মুখের ত্বকের জন্য ভালো অবশ্যই নয়।
মুখের ময়শ্চারাইজার হিসেবে বডি লোশন মাখা একেবারেই উচিত নয়।
- স্পর্শকাতর: মুখের ত্বকের সঙ্গে সারা শরীরের ত্বকের তফাৎ আছে। শরীরের বাকি অংশের ত্বক অনেক পুরু এবং তাতে সহজে প্রতিক্রিয়া হয় না। অন্যদিকে মুখের ত্বক পাতলা ও স্পর্শকাতর। তা ছাড়া মুখ রোদ, দূষণের মতো পরিবেশের ক্ষতিকর উপাদানের সংস্রবে থাকে অনেক বেশি, ফলে মুখের দরকার বিশেষ যত্ন যা রোজকার সাধারণ বডি লোশন জোগান দিতে পারে না।
- ফর্মুলাই আসল: বিশেষ ফর্মুলার কথাই যখন উঠল, তখন জানানো যাক, ফেস ক্রিমে নানারকম সক্রিয় উপাদান থাকে যা ত্বকের বিশেষ প্রয়োজনগুলো মেটায়। আপনার তেলতেলে ত্বক হলে এমন ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে যাতে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড থাকে। শুষ্ক ত্বক হলে আপনার প্রয়োজনীয় উপাদান হ্যালুরনিক অ্যাসিড। ফেসিয়াল ময়শ্চারাইজারে ত্বকের ধরনের উপযোগী বিশেষ উপাদান থাকে এবং তা ত্বকের বিশেষ প্রয়োজন পূরণের জন্য তৈরি হয়। ফেসিয়াল ময়শ্চারাইজার ঘনত্বের দিক থেকে অনেক হালকা, ফলে সক্রিয় উপাদান মুখে লাগানো যায়। অন্যদিকে বডি লোশনে তৈলাক্ত উপাদান থাকে যা ত্বক আর্দ্র রাখলেও মুখের ত্বকের পক্ষে খুব ভারী।
- রোমছিদ্র বন্ধ: মুখের ময়শ্চারাইজারের চেয়ে বডি লোশন অনেক ঘন আর তৈলাক্ত, ফলে ত্বকে চট করে শুষে যায় না। এ জন্য রোমছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। আর রোমছিদ্র বন্ধ মানেই ব্ল্যাকহেড, হোয়াইটহেড, ব্রণর উৎপাত।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ ত্বকে কোনও সমস্যা থাকলে বা ত্বক স্পর্শকাতর হলে বডি লোশন ঠিকমতো কাজ করবে না। ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করা ছাড়াও বডি লোশন থেকে ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে, এগজিমা বা সোরিয়াসিসের সমস্যা থাকলে তা বেড়ে যেতে পারে। যদি ভাবেন হ্যান্ড ক্রিমটাই ময়শ্চারাইজারের মতো মুখে মাখবেন, তা হলে জেনে রাখুন, হ্যান্ড ক্রিম বডি লোশনের চেয়েও ঘন আর এ থেকে মুখে আরও বিশ্রীভাবে ব্রণ বেরোতে পারে।
বডি লোশনের আর্দ্রতা কতক্ষণ স্থায়ী হয়?
দীর্ঘ সময় আর্দ্রতা ধরে রাখতে তেল ও লোশনের মিশ্রণ ব্যবহার করা ভালো। লোশন দেহের আর্দ্রতা ত্বকে আটকে রাখে। আর তেল আর্দ্রতা ধরে রাখার পাশাপাশি বাড়ায় প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা। এগুলো ব্যবহারে ত্বক মসৃণ, কোমল ও উজ্জ্বল দেখায়। প্রাকৃতিক উপাদান যেমন- ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে প্রতিরক্ষক হিসেবে কাজ করে। শুষ্কতা, চুলকানি প্রতিরোধ করতে বডি লোশন আর্দ্রতা যোগায়।
ডা. ক্যাম্প বলেন, “বডি লোশনে প্রায়ই এমন কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয় যা ত্বকের সুরক্ষার স্তর মজবুত করে এবং বাহ্যিক পরিবেশের হাত থেকে রক্ষা করে।”