পোরস কী?
আমাদের স্কিনের সারফেস অর্থাৎ ত্বকের উপরিভাগে থাকা লোমকূপই হচ্ছে পোরস। পোর মানে রোমকুপ, এটা জন্মগতভাবে সব মানুষেরই থাকে। এই পোরসের মাধ্যমেই বডির সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে তেল, ঘাম বের হয়ে যায়। পোরস আমাদের স্কিনের টেম্পারেচার রেগুলেট করে। পোরসের মাধ্যমে আমাদের শারীরবৃত্তীয় কাজকর্ম অব্যাহত থাকে। আমাদের মুখের স্কিনে কমবেশি প্রায় ২০ হাজার রোমকুপ আছে, আর সারা শরীরে তো আছেই, এটা ন্যাচারাল। কিন্তু মুখে যখনই কয়েকটা বড় বড় খোলা রোমকূপ দেখি, তখনই আমাদের চিন্তা শুরু হয়ে যায়!
পোরস কত প্রকার ও কি কি?
পোরস সাধারণত দুই ধরনেরঃ
- প্রথমত, ক্লগড পোরসঃ আমাদের স্কিনে থাকা সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে ন্যাচারালি সেবাম প্রোডিউস হয়। মূলত স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড ও প্রোটেক্টেড রাখাই সেবামের প্রধান কাজ। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু থেকে স্কিনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি প্রোটেক্টিভ ব্যারিয়ার তৈরি করে সেবাম। যতক্ষণ সেবাম ন্যাচারালি প্রোডিউস হয়, ততক্ষণই এটা স্কিনের জন্য বেনিফিসিয়াল। তবে এক্সেস সেবাম প্রোডিউস হলে এর সাথে ডেড সেলস, সোয়েট, পল্যুটেন্ট, মেকআপ রেসিডিউ ইত্যাদি অ্যাড হয়ে পোরস ক্লগ হয়ে যেতে পারে।
- দ্বিতীয়ত, এনলার্জড পোরসঃ এনলার্জড পোরস এর অর্থ হচ্ছে পোরসের সাইজ বড় হয়ে যাওয়া। জেনেটিক্যাল, হরমোনাল ইমব্যালেন্স, বয়স বৃদ্ধি এবং আমাদের রেগুলার করা কিছু স্কিন কেয়ার মিসটেকের কারণে পোরসের সাইজ বড় হয়ে যায়। যার কারণে স্কিনে সেগুলো ভিজিবল হয়।
পোরসের কাজ কি ?
- পোরসের প্রধান কাজ হল আমাদের ত্বকের ঘাম, তেল এগুলি বের করা।
- সেবাম সিক্রেশনের মাধ্যমে ত্বকের অয়েল প্রোডাকশন ও ময়েশ্চার লেভেল ব্যালেন্স করা
- পোরস ত্বকের শ্বাসপ্রশ্বাসে সাহায্য করে ।
- ত্বকের জলীয় ভাব ধরে রাখে ।
- ত্বককে ঠান্ডা রাখে ।
- স্কিনের টেম্পারেচার কন্ট্রোল করা
যেসব ভুলের কারণে পোরস বড় হয়ে যায়ঃ
সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সাথে স্কিনের ইলাস্টিন ও কোলাজেন লুজ হতে শুরু করে, তখনই ত্বকের পোরস দেখা যায়। এছাড়া সান ড্যামেজ, ব্ল্যাক হেডস, অতিরিক্ত সেবাম ক্ষরণ অর্থাৎ অয়েলি স্কিন, হরমোনাল ইস্যু, স্কিন কেয়ার না করা এসব কারণে খোলা রোমকুপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও আরোও কিছু কারণ রয়েছে।
- ওভার ওয়াশিংঃ বার বার ক্লেনজার দিয়ে ফেইস ওয়াশ করলে সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে বেশি সেবাম প্রোডিউস হতে থাকে। ফলে পোরস ক্লগড ও এনলার্জ হওয়ার চান্স বেড়ে যায়।
- স্কিন এক্সফোলিয়েট না করাঃ সময়মতো স্কিন এক্সফোলিয়েট না করলে স্কিনের ডেড সেলস, এক্সেস সেবাম, ঘাম ইত্যাদি একসাথে জমে পোরস ক্লগ করে ফেলে। তখন বন্ধ হয়ে যাওয়া পোরস থেকে এক্সেস অয়েল ও সোয়েট বের হওয়ার জন্য পোরস এ প্রেশার দেয়। যার কারণে পোরস স্ট্রেচ হয় এবং এনলার্জড পোরস ভিজিবল হয়।
- ঠান্ডা পানির ব্যবহারঃ অনেকেই পোরসের সাইজ মিনিমাইজ করার জন্য বরফ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি দিয়ে ফেইস ওয়াশ করেন। এতে ত্বকের তেমন কোনো বেনিফিট তো হয়ই না, বরং পোরসের সাইজ বড় হয়ে যায়।
- সূর্যের আলোঃ বাইরে যাওয়ার সময় প্রোপার সান প্রোটেকশন ইউজ না করার কারণে মেছতা বা মেলাজমা দেখা দেয়। সেই সাথে কমে যায় স্কিনের ইলাস্টিসিটি ও কোলাজেন প্রোডাকশন। যার ফলে স্কিনে এজিং সাইনস ভিজিবল হয়, আর এর প্রধান লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় এনলার্জড পোরস।
পোরস পুরোপুরি দূর করা সম্ভব?
সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিনের ইলাস্টিন ও কোলাজেন লুজ হতে শুরু করে, তখনই ত্বকের পোরস চোখে পড়ে। এছাড়া সান ড্যামেজ, ব্ল্যাকহেডস, অতিরিক্ত অয়েলি স্কিন, হরমোনাল ইস্যু, স্কিন কেয়ার না করা এসব কারণে ওপেন পোরসের সমস্যা দেখা দিতে পারে । তাই আমাদের সব সময় সতর্ক হওয়া প্রয়োজন কারন ত্বক যত টানটান হবে, সারফেসের ছিদ্র তত ছোট থাকবে ।
পোরস ত্বক থেকে পুরোপুরি দূর করা তো সম্ভব না, কিন্তু পোরস বড় হয়ে যাওয়ার যে সমস্যা সেই সমস্যার কিছু সমাধান আছে । সঠিক ভাবে স্কিন কেয়ার করে আমরা এই প্রব্লেম থেকে মুক্তি পেতে পারি । এসব ক্ষেত্রে ন্যাচারাল ইনগ্রিয়েন্টস ইউজ করা সবচেয়ে ভাল, এতে স্কিনে কেমিক্যাল প্রোডাক্টের ইফেক্ট পরে কম ।
বয়স বৃদ্ধি এবং সূর্যের আলোর ফলে পোরসের প্রভাবঃ
সূর্যের আলোতে অধিক সময় কাজের ফলে ত্বকের ওপেন পোরস সমস্যার কারণ হতে পারে। স্কিন থেকে কলাজেন এবং জল বের হয়ে যায়, যা ত্বকের রোমকুপ গঠন করে সংকুচিত করে। এটি ত্বক থেকে প্রোটিন প্রসারণ এবং বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন গুলি ক্ষতি করতে পারে। এটি ত্বকের উপস্থিতি থেকে জল এবং প্রোটিন অপসারণ করতে পারে, যা রোমকুপের দাগ বৃদ্ধি করে।
প্রাকৃতিক / ঘরোয়া উপায়ে পোরস দূর করার উপায়ঃ
- অ্যালোভেরা জেলঃ অ্যালোভেরা জেল প্রাকৃতিক উপাদানের ভেতর সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে । সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ডাবল ক্লিনজিং এর পর ফেশ অ্যালোভেরা জেল মুখে ম্যাসাজ করে দশ মিনিট রেখে দিন, এটা স্কিনকে হাইড্রেট করার পাশাপাশি পোরসের আকার ছোট করতে হেল্প করে ।
- ডিমের সাদা অংশের মাস্কঃ ডিমের সাদা অংশের সাথে সামান্য ওটমিলের গুড়ো এবং সামান্য লেবুর রস মিলিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে লাগান নিয়মিত, এটা স্কিনকে টানটান করতে হেল্প করে ।
- বেসন, টকদই ও হলুদঃ এক চামচ পরিমান বেসনের সাথে এক চামচ পরিমান টকদই এবং এক চিমটি হলুদগুড়া একত্রে ভালভাবে মিশিয়ে মুখে লাগান । শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন । কিছুদিনের ভেতর পোরস ছোট হয়ে যাবে এবং ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরে আসবে ।
- অ্যাপল সাইডার ভিনেগারঃ ১:১ পরিমাণ অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের সাথে এক চামচ পরিমাণ পানি মিশিয়ে নিন । তারপর একটি তুলোর বলের মাধ্যমে মুখে লাগান মিশ্রণটি । শুকোতে দিন মিশ্রণটি, নিয়মিত এটি টোনার হিসাবে ইউজ করলে ওপেন পোরসের সমস্যা কমে যাবে ।
- বরফঃ শুনতে অবাক লাগলেও বরফ পোরসের প্রব্লেম কমাতে অনেক হেল্প করে । এক টুকরো আইসকিউব পরিষ্কার সুতির কাপড়ে কভার করে রোজ পুরো স্কিনে আলতো ভাবে ম্যাসাজ করুন । বরফ স্কিনকে টানটান করে, স্কিনে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যার ফলে ওপেন পোরসের সমস্যা কমায় ।
- আলুঃ আলু ঘষে আলুর রস স্কিনে লাগান । ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন । চাইলে আলু ব্লেন্ড করে আইসকিউব বানিয়েও ব্যবহার করতে পারেন । আলু স্কিনের পোরস কমাতে খুবই হেল্প করে, পাশাপাশি এটি ডার্ক সার্কেল, একনে মার্কস দূর করে । ঘরোয়া টোটকাগুলি তো জানলাম । এছাড়াও কিছু জিনিস মেনে করলে ওপেন পোরসের সমস্যা থেকে ত্বককে দূরে রাখা যায় । আমাদের সকলের স্কিন টাইপ এক হয় না । তাই স্কিন অনুযায়ী সবার স্কিন কেয়ার রুটিন ও আলাদা হয় ।
- কলার খোসাঃ কলা খেয়ে খোসা ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কলার খোসা ভালোমতো ধুয়ে নিন ও আলতো হাতে ঘষুন। মাখা শেষে পানি দিয়ে মুখে ঝাপটা দিন। মুখ পরিষ্কার করে ক্রিম লাগান। একদিন বাদ দিয়ে দিয়ে এই পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিন। এতে পোরস ছোট হবে।