খুশকি (Dandruff) কি?
খুশকি সমস্যায় কখনোই ভোগেননি, এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়াই যাবে না! কারণ এটা অতি সাধারণ একটা সমস্যা। খুশকি মূলত এক ধরনের মৃত কোষ অথবা মরা চামড়া, যার কারণে ত্বকে বিভিন্ন সংক্রমণ দেখা দেয়, যেমন ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ও ব্রণ। এর ইংরেজি নাম সেবোরেক ডারমাটাইটিস। মাথার ত্বকে ম্যালাসেজিয়া নামক এক ধরনের ছত্রাক অথবা ইস্টের সংক্রমণ বেশি হলে অথবা অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হলে মাথায় মৃত কোষ বেড়ে খুশকি হয়।
খুশকি হওয়ার প্রধান কারণ কি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, খুশকি হওয়ার মূল কারণ হলো ফাঙ্গাল ইনফেকশন। ম্যালাসেজিয়া নামক একটি ফাঙ্গাসের কারণেই মূলত খুশকি হয়। এছাড়া স্ক্যাল্পে কোনো গুরুতর সমস্যার কারণেও খুশকি হতে পারে। আবার একজনের চিরুনি অন্যজন শেয়ার করা বা নিয়মিত চুল পরিষ্কার না রাখলেও খুশকি হয়। এছাড়া মাথার ত্বকে ঘাম জমার কারণেও খুশকির সমস্যা বেড়ে যায়।
ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (এনএইচএস) তথ্যমতে, ‘খুশকির কারণে মাথার চামড়ায় সাদা রংয়ের পরত পড়ে, যা শুষ্ক হয়ে তালু থেকে উঠে আসে। সাদা হওয়ায় চুলে বিশেষ করে কালো চুলে খুশকি বেশি দেখা যায়’।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মালোজি অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘অনেকেই মনে করেন অপরিচ্ছন্ন থাকার কারণে মাথায় খুশকি হয়ে থাকে। তা পুরোপুরি সত্য নয়। তবে নিয়মিত চুল পরিষ্কার না করলে খুশকি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তা ছাড়া, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ঠাণ্ডা আবহাওয়াও খুশকির অন্যতম কারণ।
খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়সমূহ
- খাবার পানিঃ শরীরে পানির অভাব থাকলে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই চুল এবং মাথার ত্বকের যত্ন নিতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- চুলে শ্যাম্পুঃ প্রতিদিন চুলে শুধু শ্যাম্পু করলে হবে না, একদিন পর পর মাথায় তেল লাগাতে হবে। এ ছাড়া শ্যাম্পু ব্যবহারের পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
- আপেল সিডার ভিনেগারঃ একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল, তাই ছত্রাকের বিরুদ্ধে দারুণ কার্যকর। তাই এটি মাথার ত্বক সুরক্ষিত রাখতে ও খুশকি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। এ ছাড়া আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যাসিড মাথায় খুশকি তৈরিতে বাধা দেয়।
- নিম পাতায়ঃ থাকা অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান খুশকি দূর করে। এর অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান স্ক্যাল্প ভালো রাখে।
- অ্যালোভেরাঃ জেলের সঙ্গে আমন্ড অয়েল মিশিয়ে চুলে লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে। এটি খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
- গ্রিন টিঃ ব্যাক্টেরিয়া-রোধী উপাদান সমৃদ্ধ এবং এটা মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই খুশকি কমাতে গ্রিন টি অনেক উপকারী।
- মেথি ও মৌরিঃ রাতে এক টেবিল চামচ মেথি ও এক টেবিল চামচ মৌরি ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেটার পেস্ট তৌরি করে গোসলের আগে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখুন। খুশকি অনেকাংশেই দূর হবে।
- মধু ও লেবুঃ খুশকি দূরীকরণে মধু ও লেবু বেশ কার্যকর। তিন টেবিল চামচ মধুর ভেতর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে প্রয়োগ করলে খুশকি দূর হয়।
- পেঁয়াজের রস ও আদার রসঃ খুশকি দূর করতে পেঁয়াজের রস ও আদার রস বেশ কার্যকর। থেঁতলে রস বের করে তুলার সাহায্যে লাগাতে পারেন। আবার থেঁতলে নেওয়া অংশটুকু পাতলা কাপড়ে মুড়ে মাথার ত্বকে রস লাগাতে পারেন।
- পুরনো তেঁতুল পানিতে গুলে নিন: গোলানো তেঁতুল চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগান। ১০-১২ মিনিট অপেক্ষা করে চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুদিন তেঁতুল মাথায় দিন। এতে খুশকি যেমন দূর হয় তেমনি মাথার চুলকানিও কমে যায়।
- টকদই: খুশকি দূর করতে ও চুল ঝলমলে করতে খুবই কার্যকরী। ৬ টেবিল চামচ টকদই খুব ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এরপর এতে ১ টেবিল চামচ মেহেদি বাটা ভালোভাবে মেশান। মিশ্রণটি চুলের গোড়াসহ পুরো চুলে লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর চুল ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। এতে চুল যেমন খুশকিমুক্ত হবে তেমনি চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে ও রেশমি।
- ডিমের সাদা অংশের সাথে ৪ টেবিল চামচ টকদই খুব ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। এরপর এতে ১ টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস মেশান। মিশ্রণটি মাথার ত্বকসহ পুরো চুলে লাগান। ২০ মিনিট পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত ১ বার এটা ব্যবহার করুন।
- অলিভ ওয়েলঃ চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে ও খুশকি দূর করতে অলিভ অয়েলের জুড়ি নেই। অলিভ অয়েল গরম করে নিন। এতে পাতিলেবুর রস মেশান। চুলের গোড়াসহ পুরো চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এরপর চুল ভালো করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার চুলে অলিভ অয়েল লাগান। খুশকি দূরের পাশাপাশি চুল হবে কোমল ও ঝলমলে। একই পদ্ধতিতে নারকেল তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
- তুলসী ও আমলকির পেস্ট: কয়েকটি তুলসী পাতা নিয়ে আমলকী পাউডারের সঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট করে নিন। তিন মিনিট এই পেস্ট মাথার ত্বকে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণ চুলের ত্বকে পুষ্টি জোগায় এবং খুশকি কমাতে সাহায্য করে।
- রিঠা: চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে রিঠার জুরি নেই। তেমনি খুশকি দূর করতেও এটি বেশ কার্যকর। রিঠা পাউডার চুলের ত্বকে লাগিয়ে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ভালোমতো ধুয়ে ফেলুন।
- সাদা ভিনেগার: সাদা ভিনেগার পুরো চুলে ও মাথাত ত্বকে তেলের মতো করে লাগিয়ে নিন। একটু বেশি করে লাগিয়ে নেবেন মাথায়। একটি তোয়ালে দিয়ে পুরো মাথা পেঁচিয়ে সারারাত রাখুন। পরের দিন সকালে চুল ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু করে। সপ্তাহে ২ বার করুন, খুশকি দ্রুত দূর হবে।
- লবণ: তিন চামচ লবণ মাথার শুষ্ক ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে নিতে হবে দু’তিন মিনিট। এরপরই চুলে শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
- বিট এবং আদার পেস্ট: খানিকটা আদা এবং বিট নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। প্রতি রাতে মাথায় এই মিশ্রণ লাগিয়ে মালিশ করতে হবে। সকালে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
খুশকি দূর করতে কিছু হ্যাকস ফলো করুন:
- নিয়মিত চুল আঁচড়ান। এতে খুশকি হবার সম্ভাবনা কমে যাবে।
- পুষ্টিকর খাবার খান। এতে মাথার ত্বক ও চুল ভালো থাকবে।
- চুল নিয়মিত পরিষ্কার করুন। কারণ অপরিচ্ছন্ন চুলে খুশকি হয় বেশি।
- কিছু চর্মরোগ সাধারণভাবে দেখতে খুশকির মতো হয়।
- মাথায় খুশকির পরিমাণ বেশি হলে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হোন।