প্রাকৃতিক উপায়ে এলোভেরা দিয়ে মেছতা দূর করার ১০০% কার্যকরী উপায়

মেছতা কী?

পৃথিবীর সবচেয়ে রূপবতী নারীদের নামের তালিকার শুরুর দিকেই থাকবেন রানি ক্লিওপেট্রা। মিসরের লোককাহিনি বলছে, রূপচর্চায় অ্যালোভেরা ব্যবহার করতেন রানি। অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় এক ভরসার নাম।

মুখের অংশবিশেষে কালচে বা বাদামি ছোপ বা দাগকেই আমরা মেছতা বা মেসতা বলে। মেছতা আমাদের দেশের খুবই সাধারণ একটি ত্বক সমস্যা। চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় এটিকে ‘মেলাসমা’ বলা হয়। মুখের মধ্যে গালের উপরিভাগে এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। প্রথম অবস্থায় ছোট আকারে দেখা দিলেও এটি আস্তে আস্তে ছড়িয়ে যায়।

এলোভেরা কি?

এলোভেরাকে ঘৃতকুমারীও বলা হয়। এলোভেরা একটি রসালো প্রজাতির উদ্ভিদ। এই গাছটা দেখতে অনেকটা কাঁটাওয়ালা গাছের মত। অ্যালোভেরার আদি নিবাস আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চল ও মাদাগাস্কায়। প্রাচীনকাল থেকে ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার হয়ে আসছে। এলোভেরা বিশেষ রকমের খনিজ পদার্থ দ্বারা সমৃদ্ধ। মানব দেহের জন্য যে ২২টা অ্যামিনো এসিড প্রয়োজন এতে তা বিদ্যমান।

মেছতা হওয়ার কারণ

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেছতার প্রাদুর্ভাবের পেছনে বংশগত প্রবণতা দেখা যায়। শতকরা হিসাবে বলতে গেলে প্রায় ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই বংশগত ইতিহাস পাওয়া যায়। আর যেসব ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাঁদের নিকট পূর্বপুরুষদের মধ্যে কারো মেছতা থাকার ইতিহাস জানেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে আরো দূরের পূর্বপুরুষ, যাঁদের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের সাক্ষাৎ ঘটেনি, তাঁদের মধ্যে কারো মেছতা ছিল বলে ধারণা করা হয়।

মেছতা কত প্রকার এবং কি কি?

  • সবচেয়ে ওপরের অতি সূক্ষ্ম স্তরটিকে ‘এপিডারমিস’
  • তার নিচের অধিকতর পুরু স্তরটিকে ‘ডারমিস’
  • সবার নিচে মূলত ফ্যাট দিয়ে গঠিত স্তরটিকে ‘সাবকিউটিস’ বলা হয়।

৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে মুখে মেছতা পড়তে দেখা দেয়। হাত বা বুকের ওপরও হতে পারে। মুখের ঠিক কোথায় মেছতা হচ্ছে, সেই অনুযায়ী একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন কপাল, নাক, মুখ, থুতনিতে হলে একে সেন্ট্রোফেসিয়াল, নাক ও গালে হলে ম্যালার এরিয়া ও শুধু থুতনি বরাবর হলে একে মেন্ডিবুলার মেছতা বলে। মেছতা যদি ত্বকের ওপরের স্তরে হয়, তখন তাকে এপিডার্মাল মেলাজমা ও ভেতরের স্তরে হলে ডার্মাল মেলাজমা বলে। দুই স্তরেই যদি হয়ে থাকে, তাহলে সেটাকে মিক্স মেলাজমা বলা হয়। মেছতার প্রধান কারণ হচ্ছে জেনেটিক প্রিডিসপজিশন। এ ছাড়া সূর্যের আলো, চুলার আগুন, গর্ভাবস্থা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও কসমেটিকসের প্রতিক্রিয়ার জন্য এটি হতে পারে।

মেছতার চিকিৎসা পদ্ধতি

এ রোগের চিকিৎসা নিয়ে রয়েছে বহুবিধ বিভ্রান্তি। যেহেতু মেছতা মুখের ব্যাপক সৌন্দর্যহানি ঘটায় এবং এ রোগের জন্য আক্রান্ত ব্যক্তি প্রচুর মনঃকষ্টের শিকার হয়ে থাকেন, তাই মানুষের মনের এই সংবেদনশীলতাকে অপব্যবহার করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মেছতা চিরনির্মূল করার অঙ্গীকারসমেত অত্যন্ত ক্ষতিকর উপাদানে প্রস্তুত কিছু প্রলেপ বাজারে ছড়িয়ে যাচ্ছেন, যা ব্যবহারে মেছতা চিরতরে নির্মূল তো হয়ই না, বরং ত্বকের ক্ষতিসাধন করে থাকে, যা অনেক সময় প্রতিকারের অযোগ্য হয়ে যায়।

মেছতা দূর করার প্রাকৃতিক উপায়

বর্তমানে মেছতা দূর করার জন্য অনেকে লেজার ট্রিটমেন্ট করতে চান। তবে লেজার শুধু করালেই হয় না, এরপর প্রয়োজন পড়ে বাড়তি যত্নের। এদিকে বেশিরভাগই লেজার ট্রিটমেন্টের পরে সঠিকভাবে যত্ন নেন না। যে কারণে ত্বক আরও বেশি খারাপ হয়ে যায়।

  • টক দইঃ মেছতা দূর করতে অন্যতম কার্যকরী উপায় হলো টক দইয়ের ব্যবহার। সামান্য টক দই ফেটিয়ে নিয়ে মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর অপেক্ষা করুন ১৫-২০ মিনিট। সময় হলে ধুয়ে নিন। নিয়মিত টক দইয়ের ব্যবহারে মেছতা দূর হবে, বাড়বে ত্বকের উজ্জ্বলতাও।
  • লেবুর রসঃ লেবুর রস কখনোই সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না। কোনোকিছুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। সামান্য পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এরপর ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিটের মতো। লেবুর রসে থাকে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এটি সূর্যের আলোর ক্ষতিকর রশ্নির থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
  • আমন্ড অয়েলঃ  আমন্ড অয়েলের অনেক উপকারিতা সম্পর্কে শুনেছেন নিশ্চয়ই? এটি আমাদের চুলের জন্য দারুণ কার্যকরী। শুধু চুলের ক্ষেত্রেই নয়, ত্বকের যত্নেও সমান উপকারী আমন্ড অয়েল। ২-৩ ফোঁটা আমন্ড অয়েল নিয়ে মেছতার স্থানে নিয়মিত ম্যাসাজ করতে হবে। এভাবে ঘণ্টাখানেক রেখে ধুয়ে ফেলবেন। নিয়মিত ব্যবহারে মেছতার দাগ দূর হবে।
  • হালকা গরম তেলঃ ত্বকে ব্যবহার উপযোগী যেকোনো তেল হালকা গরম করে মুখে ম্যাসাজ করুন। যতক্ষণ না ত্বক তেলটুকু শুষে নেয় ততক্ষণ ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর এভাবে রেখে দিতে হবে অন্তত ঘণ্টাখানেক। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। নিয়মিত এভাবে ব্যবহার করলে মেছতা দূর হবে।
  • সানস্ক্রিনঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারেন না। কিন্তু সূর্যের তাপ থেকে ত্বককে বাঁচাতে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিন বাইরে বের হওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। সেইসঙ্গে রোদের বের হলে সঙ্গে ছাতা, মাস্ক ও সানগ্লাস রাখবেন।
  • সিক্রেট বডিপ্যাক

    সিক্রেট বডিপ্যাক

    কালচে দাগ দূর, স্কিনের হারিয়ে যাওয়া উজ্জলতা ফিরিয়ে আনে ও সফট করে।। হাত, পা,ঘাড়,গলা,পেট,পিঠ সবখানে…
    Add to cart 450.00৳ 

এলোভেরা দিয়ে মেছতা দূর করার উপায়

রূপচর্চায় প্রাচীনকাল থেকে এলোভেরা একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান হিসেবে বহুল পরিচিত। চেহারায় সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে এবং চেহারার শুষ্ক ভাব দূর করতে এলোভেরা খুব কার্যকরী। এছাড়াও চেহারার মেছতা দূর করতে এলোভেরা খুব কার্যকরী ও সহজলভ্য একটি প্রাকৃতিক ভেষজ।

আমাদের দেশে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে অল্প বয়সে চেহারায় মেছতা দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে ৩০ বা ৩৫ বছর অতিক্রম করলে চেহারায় মেছতার ছাপ পড়ে। চেহারায় মেছতা পড়লে চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হয়। এর ফলে অল্প বয়সে চেহারায় বয়স্ক ভাব দেখা দেয়।

  • মুখের মেছতা দূর করার জন্য প্রথমে আপনাকে এলোভেরা সংগ্রহ করতে হবে। এরপর অ্যালোভেরা থেকে এলোভেরা জেল বের করে নিতে হবে।
  • সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে একটি জেল তৈরি করতে হবে। তারপর এলোভেরা ও মধুর মিশ্রণে তৈরি জেলটি মুখের যে স্থানে মেছতা আছে সেখানে আঙ্গুলের সাহায্যে ভালোভাবে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • তাই এলোভেরা জেল ব্যবহার করে আপনি আপনার ত্বকে খসখসে ও শুষ্কতা ভাব দূর করে ত্বককে মসৃণ ও উজ্জল করতে পারেন। এভাবে মেছতা দূর করতে এলোভেরা ব্যবহার করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভালো ভালো ফল পাওয়া সম্ভব হয়। তাই মেছতা দূর করতে হলে আপনাকে একটু সময় নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে এলোভেরা ব্যবহার করতে হবে।

অ্যালোভেরা ব্যবহারে সতর্কতা

ক্ষত বা আক্রান্ত স্থানে অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে সংক্রমণ ও এমনকি প্রদাহ বাড়তে পারে। অ্যালোভেরা ব্যবহারের সবচেয়ে ভালো উপায় হল পাতার তাজা জেল ব্যবহার করা।

সপ্তাহে দুবার ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। ফেমিনা ডট ইন তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘দ্য হেল্থ রেঞ্জার’ হিসেবে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের মাইক অ্যাডামসের উদ্ধতি দিয়ে জানায়, বহু ভেষজ উপাদানের মধ্যে অ্যালোভেরার পুষ্টি গুণ ও রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা সবচেয়ে চমকপ্রদ।