হেয়ার অয়েল (Hair Oil) কী?
হেয়ার অয়েল (Hair Oil) বা তেল হলো চুলের কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট যা চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে সিল্কি ও সফট করে। চুলের যত্নে তেল অপরিহার্য। হেয়ার স্ট্র্যান্ডে পেনিট্রেট করা, চুল মসৃণ করা এবং ফ্যাটি অ্যাসিড দিয়ে চুলে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করা- তেলের কাজ মূলত এগুলোই। কার্লি কিংবা স্ট্রেইট- আপনার চুলের ধরন যেমনই হোক না কেন, শুষ্ক চুলকে হাইড্রেটেড রাখতে তেল বেশ কার্যকর। প্রাচীন সময় থেকে চুল ভালো রাখতে তেল দেওয়া হতো। হেয়ার ব্রেকেজ, ড্যামেজ, চুলের আগা ফাটা, ফ্রিজিনেস এমন অনেক সমস্যার সহজ সমাধান হেয়ার অয়েল।
চুল পরার জন্য দায়ী কে?
ব্যস্ত জীবনে নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় আমাদের কমই। তবু দিন শেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হতেই পারে, নিজের আরেকটু যত্ন নেওয়া উচিত। চুল পড়া সমস্যায় দূষণ যেমন দায়ী, আমাদের অবহেলার ভূমিকাও কম নয়। স্ক্যাল্প ও চুলের যত্নে ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু অনেকেই না জেনে মিনারেল অয়েলযুক্ত তেল ব্যবহার করছেন, যা স্ক্যাল্প ও চুলের জন্য আরও বড় ক্ষতির কারণ। মিনারেল অয়েল চুলের ন্যাচারাল শাইন কমিয়ে দেয়, স্ক্যাল্পকে করে ফেলে ড্রাই। এর ফলে স্ক্যাল্পে নানা ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক উপাদানে হেয়ার অয়েল তৈরি করুন
- বাড়িতে হেয়ার অয়েল বানানোর জন্য প্রয়োজন নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, জবা ফুল ও পাতা, আমলকি এবং নিম পাতা। এই ৬ উপাদান একসঙ্গে ফুটিয়ে নিয়ে ছেঁকে নিন। তৈরি হেয়ার অয়েল।
- নারকেল তেলঃ নারকেল তেল চুলের যত্নে অপরিহার্য। এটি চুলকে আর্দ্রতা জোগায়, নতুন চুল গজাতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নারকেল তেলের মধ্যে থাকা প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড স্ক্যাল্প ও চুলের যত্নে বিশেষ সাহায্য করে।
- অলিভ অয়েলঃ উড়ো চুলের সমস্যাকে বশ মানায় অলিভ অয়েল। অলিভ অয়েল চুলের উপর প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। অলিভ অয়েল মাখলে চুল নরম ও মসৃণ হয়ে ওঠে।
- ক্যাস্টর অয়েলঃ স্প্লিটএন্ডের সমস্যা এক নিমেষে দূর করে ক্যাস্টর অয়েল। পাশাপাশি চুলের গোড়া মজবুত করে ক্যাস্টর অয়েল। এই তেল স্ক্যাল্পে আর্দ্রতা জোগায়। এই তেল ব্যবহার করলে চুল পড়া কমবে এবং চুল ঘন হবে।
- অ্যামিনো অ্যাসিডঃ জবা ফুল ও পাতার মধ্যে অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই উপাদান চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পাশাপাশি চুল পড়া কমায় এবং চুলে আর্দ্রতা জোগায়।
- আমলকিঃ আমলকির মধ্যে ভিটামিন সি রয়েছে, যা দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। তেলের মধ্যে আমলকির গুণাগুণ থাকলে এটি চুলকে অকালপক্কতার হাত থেকে রক্ষা করে। এতে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান রয়েছে, যা খুশকির হাত থেকে রক্ষা করে।
- নিম পাতাঃ নিম পাতা খুশকির সমস্যা দূর করে। পাশাপাশি চুলের ফলিকলকে মজবুত করে। এতে যেমন স্বাস্থ্যকর চুল গঠন হয়, তেমনই ফ্রিজিনেস দূর হয়। তাই এই ৬ উপাদান দিয়ে হেয়ার অয়েল বানিয়ে রোজ ব্যবহার করুন।
- পেঁয়াজের তেলঃ পেঁয়াজের রস আপনার চুলের জন্য খুবই ভালো। চুল ওঠা বন্ধ হয়ে নতুন চুল গজাতে খুব বেশি সময় লাগে না, যদি এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া লম্বা চুলের জন্যেও বেশ উপযোগী এই তেল। পেঁয়াজের রস চুলের জন্য বেশ কার্যকরী, তার প্রমাণ একাধিক গবেষণাতেও পাওয়া গিয়েছে। ২০০২ সালে গবেষণায় (Onion Juice Allium cepa L., A New Topical Treatment for Alopecia Areata) এই বিষয়ে উল্লেখ করা হয়।একটি গ্রুপের উপর এই পরীক্ষা চালানো হয়। যে সদস্যরা চুলে পেঁয়াজের রস লাগাতেন, তাঁদের চুল তাড়াতাড়ি বেড়েছে। নিয়মিত তাঁরা এই কাজ করতেন। নারী ও পুরুষ উভয়েই এই উপকার পেয়েছেন। নারকেল তেলের সঙ্গে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে ফুটাতে হবে। শেষে ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা করে কাচের শিশিতে রেখে দিতে হবে। এভাবেই তৈরি হবে আপনার পেঁয়াজের তেল।
- কারি পাতার তেলঃ কারিপাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট আছে। ‘ইন্টারন্য়াশনাল জার্নাল অফ ফার্মাকোগনসি অ্যান্ড ফাইটোকেমিক্যাল রিসার্চ’-এ ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এই উল্লেখ করা হয়েছিল।একটি পাত্রে পরিমাণ মতো নারকেল তেল নিন। তার মধ্য়ে এক মুঠো কারিপাতা মিশিয়ে দিন। এবার সেই ফুটাতে থাকুন। রং গাঢ় হয়ে এলে আঁচ বন্ধ করে চাপা দিয়ে রাখুন। এবার ঠান্ডা হওয়ার পরে ছেঁকে নিয়ে শিশিতে ভরে রাখুন। ব্যবহার করতে পারবেন।
- মৌরির তেলঃ এই ক্ষেত্রে আপনি নারকেল তেল বা অলিভের তেল নিতে পারে। প্রথমে একটি পাত্রে এই তেল নিয়ে গরম করে নিতে হবে। এবার এর মধ্যে মৌরির দানা মিশিয়ে দিকে হবে এক চামচ। কিছুক্ষণ গরম করার পরে নামিয়ে নিন। ঠান্ডা করে নিতে হবে এবার। ছেঁকে রেখে দিন একটি শিশিতে। আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
- রোজমেরি অয়েলঃ ক্ষতিগ্রস্ত চুলের যত্ন নেয় রোজমেরি তেল। একসঙ্গেই খুশকির সমস্যা যাঁদের রয়েছে, এই তেলে সমাধান আছে তারও। এই তেলের রোজমেরিক এবং ক্যাফেইক অ্যাসিড মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন সচল রাখে। ফলে চুল ঝরার পরিমাণ অনেকে কমে। সেই সঙ্গে চুল লম্বাও হয়। নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে চুলে মাখতে পারেন। উপকার পাবেন।